রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

চীন-ভারত সামরিক সংঘাত : কার শক্তি কতটা?

চীন-ভারত সামরিক সংঘাত : কার শক্তি কতটা?

‍স্বদেশ ডেস্ক:

লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে গত সোমবার রাতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যেন হঠাৎ করে বহুগুণ বেড়ে গেছে। ভারত দাবি করছে, এ সংঘর্ষে তাদের কমপক্ষে ২০ সেনা নিহত হয়েছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত প্রায় দেড় মাস ধরেই লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) দুপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। গতকালের ঘটনার পর সেখানে আরও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

চীন ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের কনভেনশনাল বা প্রথাগত সম্মুখ লড়াই হয়েছিল ১৯৬২ সালে। কিন্তু ওই যুদ্ধের পর বিগত দশকগুলোতে এশিয়ার এই দুটি দেশ বিপুল সমরাস্ত্র সম্ভার গড়ে তুলেছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতাও বেড়ে চলেছে।

তবে সোমবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে চীন-ভারত দুপক্ষের বক্তব্য একেবারে পরস্পরবিরোধী। দুপক্ষই বলছেন, অন্য পক্ষের সেনাবাহিনী তাদের আগের অবস্থান থেকে সামনে এগিয়ে এসে ভূমি দখল করেছেন এবং সেকারণেই হাতাহাতি-মারামারি হয়েছে। কাজেই পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে। দুপক্ষই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছে। কারা যে কোন এলাকায় ঢুকেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে দুপক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছেড়ে দিতে একেবারেই রাজি নয় এবং প্রয়োজনবোধে তারা হাতাহাতি করবেন, সেটা তারা করেছেনও।

চীন ও ভারত দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে তাদের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন এটা করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে ও লাদাখ অঞ্চলে। দুটি দেশই এসব জায়গায় রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রেডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দুপক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। সেখানে সামরিক মহড়াও দিয়েছে দুই দেশ। কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

তবে দুটি দেশেরই স্বার্থ হচ্ছে যুদ্ধে না জড়ানো। কারণ যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশ ব্যাপক হবে। দুটি দেশেরই ক্ষতি হবে। চীন ও ভারত উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দুই দেশের সংঘাতে যদি ক্রমবর্ধমান হারে ভয়ংকর সমরাস্ত্রের ব্যবহার হতে থাকে, দুই দেশই আসলে পরস্পরকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কাজেই কোনো দেশই সে রকম ব্যাপকতর কোনো সংঘাতে জড়াতে চায় না। কারণ শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফল কী দাঁড়াবে সেটা কেউই এখন পর্যন্ত বলতে পারে না।

কার শক্তি কতটা?

দুটি দেশেরই বিপুল অস্ত্রসম্ভার রয়েছে এবং এসব অস্ত্রশস্ত্র বেশ আধুনিক। গত ২০ বছর ধরে দুটি দেশ শুধু নিজেরাই সমরাস্ত্র তৈরি করেনি, একই সঙ্গে অস্ত্র আমদানিও করেছে। বিশেষ করে ভারত পরপর পাঁচ বছর বিশ্বের সবচাইতে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশের স্থান দখল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েল থেকে তারা অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র এনেছে। তারা নিজেরাও বিদেশি প্রযুক্তি এনে নিজেরা অস্ত্র তৈরি করেছে। একইভাবে চীন রাশিয়া থেকে কিছু অস্ত্র কিনেছে, কিন্তু বেশির ভাগ অস্ত্র তারা এখন নিজেরা উৎপাদন করে ।

কাজেই অত্যাধুনিক অস্ত্র দুপক্ষেরই আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো গিরিসংকুল পার্বত্য এলাকায় তারা সেসব অস্ত্র কতটা ব্যবহার করতে পারবে। বিমান বহর ও ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো তারা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাকে আমরা সেনাবাহিনী বলি, যারা মাটিতে যুদ্ধ করে, তারা তাদের গোলন্দাজ, সাঁজোয়া বা ট্যাংক বহর খুব একটা ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে হয় না।

গত  ক’দিন ধরে গণমাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দুই দেশের সামরিক শক্তির অনেক তুলনামূলক হিসাব দেওয়া হচ্ছে। তিব্বত আর শিনজিয়াং অঞ্চলে চীনের কত যুদ্ধবিমান, কত সৈন্য আর ট্যাংক আছে, তার পাশাপাশি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় যে কমান্ডগুলো রয়েছে, সেখানে কত সৈনিক আর সরঞ্জাম আছে।

কিন্তু এ ধরনের অংকের হিসাব আসলে একেবারেই সঠিক নয়। কেননা যার যত সৈন্যই থাকুক, নানা কারণে সব সৈন্য কোনো দেশই মোতায়েন করতে পারে না। কারণ যেখানে এই যুদ্ধ হবে, সেখানকার ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে জায়গা নিয়ে বিরোধ, সেটা কোনো দেশের কাছে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটির জন্য তারা কতটুকু পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করতে প্রস্তুত, সেটাই আসল প্রশ্ন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877